আমের জাত নির্বাচন

User Rating:  / 3
PoorBest 

আম খেতে কোনোটা মিষ্টি, কোনোটা টক। দেখতে কোনোটা লম্বা, কোনোটা গোল। নানা বৈচিত্র্যের জন্যই আমের এত চেহারা ও স্বাদ। এ দেশে আমের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। গাছের জন্ম হয় প্রধানত দু’ভাবেন্ধ বীজের

আম খেতে কোনোটা মিষ্টি, কোনোটা টক। দেখতে কোনোটা লম্বা, কোনোটা গোল। নানা বৈচিত্র্যের জন্যই আমের এত চেহারা ও স্বাদ। এ দেশে আমের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। গাছের জন্ম হয় প্রধানত দু’ভাবেন্ধ বীজের

মাধমে এবং অঙ্গজ পদ্ধতির মাধ্যমে। আম একটি পরপরাগায়িত ফল। এর স্ত্রীফুল অন্য গাছের পরাগরেণুর মাধ্যমে নিষিক্ত হয়। এতে যে ভ্রূণ সৃষ্টি হয় তাতে মাতৃগুণ বজায় থাকে না। ফলে একই গাছ থেকে জন্মানো গাছে ভিন্নরকম আম ধরে। এ জন্য আমের শত শত বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। কয়েক দশক আগে আমের চারা তৈরি হতো বীজ থেকে। যে কারণে এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের আমগাছ দেখা যায়।

 বীজ থেকে উৎপন্ন গাছকে গুটির গাছ বলা হয়। এসব গাছের আম গুটি আম নামে পরিচিত। এসব জাতের নির্দিষ্ট নাম নেই। গাছের মালিক যে নামে ডাকেন সে নামেই পরিচিত হয়। যেমনন্ধ মধুর মতো মিষ্টি আমকে আম্রমধু, সিঁদুরে আমকে সিন্দুরী, বউকে ভুলানো আমকে বউভুলানী ও বউফুসলানী, রানীর পছন্দের আমকে রানীপছন্দ ইত্যাদি। এরকম শত শত বাহারি নামের আম এ দেশে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে হাজার হাজার গুটির গাছ থাকলেও এদের নামকরণ করা হয়নি। কেবল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত জাতগুলোর সুন্দর সুন্দর বাহারি নাম দেয়া হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক জাতের মধ্যে কিছু জাতের নামকরণ করা হয়েছে ইতিহাস ও কিংবদন্তির মাধ্যমে। যেমন বিহারের এক ল্যাংড়া ফকিরের বাড়ি থেকে উন্নত মানের যে আমগাছের চারা সংগ্রহ করা হয়েছিল তা ল্যাংড়া নামে পরিচিত। ভারতের মালদহ জেলার তৎকালীন ইংরেজ কর্মকর্তা মিস্টার ফজলির সরকারি বাসভবন থেকে সংগৃহীত আমের জাতটি ফজলি নামে পরিচিত। মতান্তরে মুর্শিদাবাদের নবাবদের বাঈজী ফজল বিবি এত মোটা ছিল যে তার মতো মোটা আমের নাম হয় ফজলি, প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ নর্তকী আম্রপালির নাম অনুসারে আধুনিক হাইব্রিড আমের নাম হয় আম্রপালি যা এ দেশে বারি আম ৩ নামে পরিচিত। আমের যে সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে সেগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য বেশ কিছু জাতের আমের নাম এখন বলছি।

 বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো বারি আম ১, বারি আম ২, বারি আম ৩ এবং বারি আম ৪। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো বাউ আম ১, বাউ আম ২, বাউ আম ৩, বাউ আম ৪, বাউ আম ৫, শ্রাবণী ইত্যাদি। তবে দেশী জাতের আমের কোনো শেষ নেই। উল্লেখযোগ্য দেশী জাতগুলো হলো অগ্নি, অমৃতভোগ, আলফাজ বোম্বাই, আনোয়ারা, আতাউল আতা, আরিয়াজল, আরাজনমা, আরাজান গুটি, আলম শাহি, আনারস, আশ্বিনা, ইলশাপেটি, কলাচিনি, কাঁচামিঠা, কপিল বাংড়ি, কালিয়া, কৃষäচূড়া, কালিভোগ, কালুয়া, কাঞ্চন খোসাল, কাজলা সিন্দুরী, কিষানভোগ, কোহিনুর, কুয়া পাহাড়ি, কালাপাহাড়, কাজল ফজলি, নাক ফজলি, কাইয়া ডিমি, কাটাসি, খুদি খিরসাপাত, খিরসাপাত, গোলাপখাস, গোলাপবাস, গোপালভোগ, গুলগুলি, টিয়াকাঠি, চেপি, চরবসা, চম্পা, চিনি ফজলি, ছানাজুর, ছফেদা, জিলাপির কাড়া, বাওয়ানি, বাউনি লতা, তাল পানি, দারভাঙ্গা, দাদভোগ, দিলসাদ, দিল্লির লাডুয়া, দুধিয়া, দেওভোগ, নারিকেলী, নয়নভোগ, নাগ ফজলি, প্রসাদভোগ, পাথুরিয়া, বৈশাখী, বারমাসি, বোতল বেকি, বোতলা, বাতাসা, বাউই ঝুলি, বিড়া, বেল খাস, বোম্বাই, বগলাগুটি, বদরুদ্দোজা, বোম্বাই খিরসা, বৌভুলানী, বাদশাভোগ, ভাদুরী, ভবানী, মালভোগ, মিসরীদাগী, মিসরী ভোগ, মিসরীদানা, ভুতো বোম্বাই, মতিচুর, মোহনভোগ, রাজরানী, রাম প্রসাদ, রানীভোগ, রাজভোগ, লখনা বা লক্ষণভোগ, লাদুয়া, ল্যাংড়া, লাডুয়া, লালমন, লতাখাট, লতা বোম্বাই, শ্যামলতা, সাটিয়ার ক্যাড়া, সাদাপাড়া, সবজা, সরিখাস, শরিফ খাস, সিন্দুরী, সাদা, সূর্যপুরী, সুরমাই ফজলি, হাড়িভাঙ্গা, হায়াতী, হিমসাগর, ক্ষীরপুরী, ক্ষীরমন, রাংগোয়াই, বারোমাসি ইত্যাদি।

 এ দেশে ভারতীয় জাতের নামও কম নেই। জাতগুলো হলো অমৃতভোগ, অনুপম, আবদুল আজিজ, অলফ্যানসো, আলী চৌরস, আম্রপালি, আমবাজান, আনারস, আমন দশেহরী, আনানাস খাশ, আলমপুর, আগমামাশু, আওবেক, কেন্ট, কালা পাহাড়, কাইটুক, গোলাপখাস লাল, চাঁপা, চৌষা, ছওসি, জাহাঙ্গীর, জামুরাদ, জারদালু, জামাদার, জাহানারা, জাওনিয়া, জাফরান, ঝুমকো ফজলি, তৈমুরিয়া, তোতাপুরী, দাউদি, দিলরোশন, দিলবাহার, দিলওয়ালা, দুধকুমার, দালুয়া, দশেহরী, ধুপা, নীলউদ্দিন, নোড়া, নীলম, নিলাম্বরী, বোম্বাই গ্রিন, বনরাজ, পেয়ারাফুলী, পীরেরফলী, রাজাপুরী, রওশান টাকি, ফজলি জাফরানি, বাঙ্গালোরা, বেগমফুলি, বেনেসান বা বাগানপল্লী, ভাদুরিয়া, বাদামি, মিঠা গাজীপুর, মালদাহ, মালগোবা, মালকুরাদ, মল্লিকা, মাদ্রাজি, মিঠুয়া পাটনা, রাসপুরী, রাগ, রাসপুনিয়া, রত্না, লাল মালগোয়া, লাভ-ই-মশগুল, লিটল ফ্লাওয়ার, সব দেরাজ, সরবতী, সেনসেশান, সামার বেহেস্ত, সুবর্ণরেখা, সামার বেহেস্ত, চোষা, স্বাদওয়ালা, সুকুর খন্দ, সরিখাস, সুরখা কোলকাতা, সেভেন-ইন-ওয়ান, সারেঙ্গী, সুগার কিং, হিমউদ্দিন, হিটলার পছন্দ, হুসনারা, রত্না ইত্যাদি। তবে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু সুন্দর নামকে প্রধান্য না দিয়ে আমের জাতের গুণাগুণ বিচার করে বিশ্বস্ত নার্সারি থেকে কলমের চারা সংগ্রহ করা উচিত। যেসব জাতের আমের স্বাদ ভালো ও মিষ্টি, আকর্ষণীয় রঙ, আঁশ খুব কম, শাঁস ও রস বেশি, আঁটি পাতলা এবং আমের আকার মাঝারি সেসব জাতই ভালো বলে বিবেচনা করা হয়। ভালো জাতের চারা এবং উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে কাáিক্ষত ফল পাওয়া সম্ভব। আসলে কোন জাতের আমগাছ লাগাবেন তা একান্তই আপনার পছন্দের ওপর নির্ভর করে। আর যদি নিজে সে সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে আমি বলব, যদি একটি আমগাছ লাগান তাহলে ‘ল্যাংড়া’ লাগান, এর বেশি লাগালে কয়েক মাস ধরে একের পর এক ভালো স্বাদের আম পেতে পারেন এমন সব জাতের গাছ লাগান। যেমন বৈশাখের শেষ ও জ্যৈষ্ঠের প্রথমে পাকা আম খাওয়ার জন্য লাগাতে পারেন ‘গোপালভোগ’ ও ‘গোলাপখাস’, জ্যৈষ্ঠের প্রথমার্ধে খাওয়ার জন্য ‘খিরসা’ ও ‘হিমসাগর’, আষাঢ়ে পাওয়ার জন্য ‘আম্রপালি’, ‘ফজলি’ ও আরো পরে শ্রাবণ পর্যন্ত পাওয়ার জন্য ‘বারি আম ৪’, ‘আশ্বিনা’, ‘শ্রাবণী ১ থেকে শ্রাবণী ৫’, ‘নীলাম্বরী’ ইত্যাদি জাতের আমগাছ লাগাতে পারেন। একই বছরে তিন-চার দফায় একই আমগাছ থেকে আম পাওয়ার জন্য ‘মিক্সড স্পেশাল’ জাতটি বেছে নিতে পারেন। ছাদবাগানের জন্য ‘আম্রপালি’ জাতটি সবচেয়ে ভালো। এখনই আমগাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই আসুন, আমরা সবাই বাড়ির আশপাশে অন্তত একটি ভালো জাতের আমগাছ লাগাই।

Leave your comments

0
terms and condition.

People in this conversation

  • Guest (ইমরান)

    কলমের চারা গাছের জীবনকাল কত?কারন নার্সারিতে এখন সব কলমের চারা।কলমের চারা কি গুটি জাত এর আম গাছের মত বড় হয় না?আর আমের কম পক্ষে ২০ রকম জাতের চারা সংগ্রহ করতে চাইলে কোথায় পাব?