x 
Empty Product
Wednesday, 14 February 2018 07:37

আমের ভালো ফলন পেতে রোগবালাই দমন ও অন্যান্য

Written by 
Rate this item
(0 votes)

ভারত উপমহাদেশে আম সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এ জন্য আমকে বলা হয় ফলের রাজা। রাজা হলেও বেড়ে ওঠার সময় অন্যান্য ফলের মতো তাকেও নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। এসব সমস্যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণই প্রধান। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন অনেক কমে যায়। তবে এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য সঠিক বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আমের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরিচর্যা শুরু করতে হবে আমবাগানে মুকুল বের হওয়ার আগেই।

আমের মহালাগা:
সঠিক সময়ে হপার পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের মুকুল বের হওয়ার সাথে সাথে এগুলো মুকুলকে আক্রমণ করে। এই পোকার আমের মুকুল থেকে রস চুসে খায় ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। পরে শুধু গাছে আম শূন্য মুকুল দেখা যায়। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০গুন পরিমাণ রস খায় এবং দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে যা মধুরস নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হয়। পরে এ থেকে জন্ম নেয় এক প্রকার ছত্রাক। এর ফলে মুকুল, ফুল ও পাতার উপর কালো রংয়ের স্তর পড়ে যা সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। ছত্রাকের এ আক্রমণকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় স্থানীয়ভাবে মহালাগা বলে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ার পর এই ছত্রাকের আক্রমণ সেখানে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে অন্যান্য এলাকাতেও এর বিস্তার ঘটে। তবে বৃষ্টি হওয়া মাত্রই এর আক্রমণ কমবে। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যেতে পারে।

দমন পদ্ধতি:
১. হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।

২. আম বাগানে মুকুল বা পুস্পমঞ্জুরী বের হওয়ার আনুমানিক ১৫-২০ দিন আগে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো), কার্বারিল, ইমিডাক্লোরোপিড, সাইহ্যালাথ্রিন গ্রুপের যে কোনো কীটনাশক দিয়ে ভালভাবে সমস্ত গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।

৩. আমের মুকুল যখন ৮ থেকে ১০ সে. মি. হয় অর্থাৎ ফুল ফোটার আগে একবার এবং আম যখন মটর দানাকৃতি হয় তখন আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সাইপারমেথ্রিন ১০ইসি, ডেসিস ২.৫ইসি, কার্বারিল, ইমিডাক্লোরোপিড, সাইহ্যালাথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ভালভাবে মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ স্প্রে করতে হবে।

৪. আমের হপার পোকার কারণে সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে। রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৫. আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ম্যাঙ্গো উইভিল
আমের ভেতর ম্যাঙ্গো উইভিল নামের এ পোকা আমের ক্ষতি করে থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হল আমের ত্বকে কোনো ছিদ্র থাকে না। এত বড় পোকা কীভাবে আমের ভেতর ঢুকে এবং বেঁচে থাকে তা সত্যিই অবাক করার মত। আমের যখন মুকুল আসে, তখন এ পোকা মুকুলে ডিম পাড়ে। মুকুল থেকে কচি আম হওয়ার সময় ফুলের ভেতরই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে কচি আমের ভেতর আস্তে আস্তে ঢাকা পড়ে। আমের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ভেতরের পোকাও বড় হতে থাকে। পোকাগুলো দিন দিন বেড়ে ওঠে আম খেয়ে। সাধারণত মুকুল ধরার সময় তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা একটু বেশি এবং উচ্চ আর্দ্রতা থাকলে এ পোকা আক্রমণ করার আশঙ্কা বেশি থাকে। এক বছর আক্রমণ করলে প্রতিবছরই এ পোকা আক্রমণ করে।

দমন
১। আমের ভেতর পোকা ঢুকে গেলে দমনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

২। এটি দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন মিশিয়ে মুকুল ধরার সময় মুকুলে স্প্রে করতে হবে। অথবা ৩০ মিলিলিটার ডায়াজিনন বা ১৫ মিলিলিটার ডাইমেক্রন প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুকুলে স্প্রে করতে হবে।

৩। এছাড়া আমগাছের নিচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডিমের গাদা নষ্ট করতে হবে। আক্রান্ত আমগাছের নিচে পড়ে থাকা পাতা ও মুকুল পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৪। মুকুল ধরার সময় এলাকার সব আক্রান্ত গাছে একসঙ্গে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। অন্যথায় যে গাছে স্প্রে করা হবে না, সেই গাছে অন্য গাছ থেকে পোকা আক্রমণ করবে।

৫। এ ছাড়া আমের ফলন বাড়াতে হলে বছরে অন্তত দু’বার সুষম মাত্রায় সার দিতে হবে।

৬। সেচ দিতে হবে প্রতি মাসে একবার।

ফলের মাছি পোকা :
মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ব ও পাকা আম আক্রান্ত হয়। ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের পরিপক্ব ও পাকা আম গাছে থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরন
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ব ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা ঝুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতের সাদা রঙের কীড়া দেখা যায়। বেশি আক্রান্ত আম অনেক সময় পচে যায়। সাধারণত এ পোকা আমের ওপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে

প্রতিকার
ক) আম গাছে পাকার আগেই পরিপক্ব অবস্থায় পেড়ে আনা
খ) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে
গ) প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে ৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষটোপ বাগানে রেখে মাছিপোকা দমন করা যেতে পারে।
ঘ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে আমবাগানে ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে
ঙ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে।
চ) মিথাইল ইউজেনল ফেরোমন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে প্রচুর পুরুষ পোকা মারা যাবে এবং বাগানে মাছি পোকার আক্রমণ কমে যাবে।

পরগাছা উদ্ভিদ :
আমাদের দেশে আমগাছে দু-তিন প্রকার পরগাছা উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়। স্খানীয়ভাবে পরগাছা উদ্ভিদ ধ্যারা নামে পরিচিত। ছোট গাছের চেয়ে বড় বা বয়স্ক আমগাছে পরগাছার আক্রমণ বেশি হয়। পরগাছা উদ্ভিদের বীজ আমগাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে। পরগাছা ডাল থেকে প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্যরস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরগাছার শিকড় থাকে না, তারা শিকড়ের মতো এক প্রকার হস্টোরিয়া তৈরি করে। হস্টোরিয়া গাছের ডালে প্রবেশ করে ডাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আক্রান্ত ডালের প্রায় সব খাবার পরগাছা খেয়ে ফেলে। ফলে আক্রান্ত ডাল দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে আম ডালের অস্তিত্ব থাকে না বরং পরগাছা প্রভাব বিস্তার করে বাড়তে থাকে। লরানথাসজাতীয় পরগাছার পাতা দেখতে কিছুটা আমপাতার মতোই। তাই ভালোভাবে লক্ষ না করলে দূর থেকে পরগাছার উপস্খিতি বোঝা যায় না। তবে পরগাছায় ফুল ও ফল ধরলে দূর থেকে পরগাছার উপস্খিতি বোঝা যায়। এ সময় পরগাছা ফুল ফুটন্ত অবস্খায় থাকে। ফলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। পরগাছা আকর্ষণীয় ফুল ও ফল উৎপন্ন করে। বীজসহ ফল পাখিরা খায়, কিন্তু বীজ হজম না হওয়ায় তা মলের সাথে বের হয়ে আসে। এ বীজ আমের ডালে পতিত হয়ে অঙ্কুরিত হয় ও বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বিস্তার লাভ করে।

প্রতিকারের উপায় :
আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্খানে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল-ফল আসার আগেই পরগাছা ছাঁটাই করা উচিত।

আমের রোগ
যাদের বাড়িতে আমগাছ আছে কিংবা যিনি প্রথমবারের মত আমের চাষ করছেন তারা প্রথমদিকে বেশ কিছু বিষয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন, যেমন- আম মুকুল হয়ে প্রতিবছরই সব মুকুল ঝরে পড়ে, পাতায় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক দাগ দেখা যায়, আমের অঙ্গ বিকৃতি কিংবা আম সংগ্রহ করার পর বোঁটায় পচন ধরাসহ ইত্যাদি। এসব বিড়ম্বনা থেকে আগেভাগেই আম এবং আমগাছ বাঁচাতে হলে আমের গুরুত্বপূর্ণ কিছু রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন।

আমের আনথ্রাকনোজ:
লক্ষণ:
১. পাতায়, কাণ্ডে, মুকুলে ও ফলে এই রোগ দেখা যায়;

২. পাতায় অনিয়মিত দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে বাদামী থেকে কালো হয়ে বড় বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং পাতা ঝরে যায়;

৩. মুকুল কালো হয়ে যায় এবং গুটিগুলো পড়ে যায়;

৪. পাকা আমে স্পষ্ট দাগ দেখা যায় যা পরবর্তীতে বড় হয়ে আমে পচন ধরায়।

দমন:
১. মুকুল আসার আগে টিল্ট ২৫০ ইসি- ০.৫ মিলিলিটার/ লিটার বা ডায়থান এম ৪৫ -২ গ্রাম/লিটার সেপ্র করতে হবে;

২. বোরডোয়াক্স মিশ্রণের ১% দ্রবণ ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার সেপ্র করতে হবে।

বোঁটা পচা রোগ:
লক্ষণ:
১. সবচেয়ে মারাত্মক রোগ, প্রথমে বোঁটার দিকে পচন ধরে পরে পুরো ফলটি পচে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে;

২. প্রথমে গাছে থাকা অবস্থায় জীবাণুটি মুক্ত অবস্থায় থাকে পরে আম সংগ্রহের পরে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখা হলে আক্রান্ত আমের পাল্পগুলো বাদামী হয়ে যায় যা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না।

দমন:
১. প্রায় ২-৩ সে.মি. বোঁটা রেখে আম সংগ্রহ করতে হবে;
২. ডায়থান এম ৪৫ অথবা বেভিসটিন (০.২%) সেপ্র করতে হবে।

আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ
বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়।

রোগের লক্ষণ
১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে ।

২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান- ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে ।

৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে । কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে।

৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না । একটা একটা করে পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যাবে

প্রতিকার:
১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের ( ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে।

২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না রেখে যত শীগ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।

৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না সেক্ষেত্রে বোর্দো মিকসার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে

৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে।

৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।

পাউডারি মিলডিউ:
লক্ষণ:
১. আক্রান্ত আম গাছের পাতায় সাদা পাউডারের মত গুঁড়ো দেখা যায়, পরে আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো মারা যায় এবং কালো বর্ণ ধারণ করে,

২. আক্রান্ত আমের মুকুল বা গুটি ঝরে পড়ে।

দমন:
১. থিওভিট বা সালফার জাতীয় যেকোনো ছত্রাকনাশক (০.২%) ব্যবহার করতে হবে।

স্যুটি মোল্ড:
লক্ষণ:
১. পাতা, ফল, মুকুল আক্রান্ত হলে কালো কালো দাগ পড়ে যায়।

দমন:
১. স্যুটি মোল্ড দমনে সালফার (৪ গ্রাম/লিটার) ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমের অঙ্গ বিকৃতি বা ম্যালফরমেশন:
লক্ষণ:
১. এটা সাধারণত মুকুলে হয় তবে ডালের আগায়ও হতে পারে;

২. আক্রান্ত মুকুল কালো হয়ে যায় এবং মুকুলগুলো একীভূত হয়ে জটলার সৃষ্টি করে।

দমন:
১. আম ধরার ৮০ থেকে ৯০ দিন আগে ন্যাপথেলিক এসিটিক এসিড সেপ্র করতে হবে;

২. আক্রান্ত স্থানে কার্বোন্ডাজিম (১ গ্রাম/ লিটার পানি) সেপ্র করতে হবে।

দাদ (Scab)
লক্ষণ
আম মটর দানার মত হলেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হতে পারে। আক্রান্ত আমের শরীর বাদামী রং ধারণ করে, খোসা ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে উঠে। আক্রান্ত আমের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা ঝড়ে পড়ে। রোগের আক্রমণে বাড়ন্ত আমের শরীরে বাদামী দাগের দৃষ্টি হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় দাগগুলো বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ আমের শরীর ঢেকে ফেলে। আক্রান্ত স্থানে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমের শরীর খসখসে অমসৃণ হওয়ার কারণে আমের বাজার দর কমে যায়।

প্রতিকার
রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩/৪ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।

ঝুল রোগ (Sooty mould)
লক্ষণ
ঝুল রোগের আক্রমণে পাতার উপর কালো আবরণ পড়ে। এই কালো আবরণ হচ্ছে ছত্রাকের দেহ (Mycellium) ও বীজ কণার সমষ্টি। আমের শরীরেও কালো আবরণ দেখা দেয়।

বিস্তার :
রোগের বীজকণা বা কনিডিয়া বাতানের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। হপার বা শোষক পোকা আমের মুকুলের মারাত্নক শত্রু । এ পোকা মুকুল থেকে অতিরিক্ত রস শোষণ করে এবং মধু জাতীয় এক প্রকার আঠাল পদার্থ (যা হানিডিউ নামে পরিচিত) নিঃসরণ করে। উক্ত হানিডিউ মুকুল ও পাতার উপর পতিত হয় তার উপর ছত্রাকের বীজকণা জন্মায় এবং কালো আবরণের সৃষ্টি করে। হপার ছাড়াও ছাতরা পোকা (মিলিবাগ)ও স্কেল পোকা হানিডিউ নিঃসরণ করে এবং ঝুল রোগের আক্রমণে সহায়তা করে। হানিডিউ ছাড়া এ রোগ জন্মাতে পারে না।

প্রতিকার
১। হানিডিউ নিঃনরণকারী হপার, মিলিবাগ বা স্কেল পোকা কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে দমনে রাখতে পারলে ঝুল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

২। আক্রান্ত গাছে সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

আমগাছের ‘অন-ইয়ার’ ও ‘অফ-ইয়ার’সমস্যা ও প্রতিকার
আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’।

সম্ভাব্য কারণ
ক. জাতের বৈশিষ্ট্য
আমের যে জাতগুলো কেবল শাখার অগ্রভাগে ফুল ধারণ করে জাতগুলোর পর্যায় ক্রমিক অর্থাৎ এক বছর অন্তর ফল উৎপাদন হয়। এই সমস্যা সব জাতের আমের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু কিছু ভালো আমের জাতের মধ্যে যেমন ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ইত্যাদিতে সমস্যাটি ভালোভাবে দেখা যায়। আর কিছু কিছু আমের জাত আছে যাদের ‘অফ ইয়ারে’ ফুল ও ফল হয়, তবে অপেক্ষাকৃত কম যেমন-ফজলি। আবার যে জাতগুলো শাখার অগ্রভাবে প্রথম বছর ও পরের বছর শাখার কক্ষে পুষ্পমুকুল উৎপন্ন করতে পারে সে জাতগুলো নিয়মিতভাবে কম/বেশি ফল উৎপাদন করতে পারে, যেমন- বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি।

খ. গাছের বয়স
যেসব জাতের মধ্যে সমস্যাটি দেখা যায় যেমন- ল্যাংড়া। কিন্তু যখন ওই ল্যাংড়া গাছের বয়স কম তখন সমস্যাটি থাকে না অর্থাৎ প্রথম দিকে প্রতি বারেই ফুল হয় কিন্তু সাধারণত ১৫-২০ বছর বয়সের পর তারা এই গুণটি হারিয়ে ফেলে।

গ. গাছের ডালের বয়স
মুকুল ধরার জন্য ডালের বয়স কমপক্ষে ৪-৫ মাস হওয়া দরকার।তবে যেসব ডালের বয়স ৮-১০ মাসের হয় সেসব ডালে বেশি মুকুল ধরে।

ঘ. পাতাওয়ালা মুকুল
আমের মুকুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালের ডগায় আসে এবং ওপর দিকে আস্তে আস্তে সুচালো হয়ে যায়, যা দেখতে পিরামিডের মতো। উপ-শাখাগুলো ফুলে ভরা থাকে, তাতে পাতা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু জাতের গাছ আছে,যাদের মুকুলে শুধু ফুলই থাকে না, সেই সঙ্গে পাতাও থাকে। বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদিতে বেশি পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। ফজলি গাছেও কিছুসংখ্যক পাতাওয়ালা মুকুল হয়, তাই এই জাতগুলো প্রায় প্রতি বছর মোটামুটি ফল আসে। অন্যান্য জাতেও মাঝে মধ্যে কিছু কিছু পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। পাতাওয়ালা প্যানিকলকে মিঙড প্যানিকল বলে।

ঙ. ডালে শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাত
আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে।

চ. উদ্ভিদ হরমোনের বৈষম্য
আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অক্সিন’, ‘জিবেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।

প্রতিকার
বাণিজ্যিক জাত যেমন- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে।

১। বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে।

২। গাছের বৃদ্ধি ও বেশি ফলনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিক পদ্ধতিতে সার ও সেচ দেয়া আবশ্যক।

গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমাণ
সারের নাম গাছের বয়স (বছর)
২-৫ ৬-৯ ১০-২০ ২০ এর ঊর্ধ্বে
জৈবসার (কেজি) ২০-৩০ ৩০-৪০ ৪০-৫০ ৪০-৫০
ইউরিয়া (গ্রাম) ২৫০ ৫০০ ১০০০ ২০০০
টিএসপি (গ্রাম) ২০০ ২৫০ ৫০০ ১০০০
এমপি (গ্রাম) ১২৫ ২৫০ ৫০০ ১০০০
জিপসাম (গ্রাম) ১০০ ২৫০ ৫০০ ৫০০
জিঙ্কসালফেট (গ্রাম) ২৫ ২৫ ২৫ ২৫

৩। বছরে দু’বার সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে আর একবার। একবারেও সব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে বেশিলাভবান হওয়া যায়। মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রুটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে গাছের বয়স অনুযায়ী এ দূরত্ব (মাঝামাঝি থেকে বড় গাছ) ১.৫-৩.০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ছোট চারা গাছের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ সেমি. হতে পারে। কাজেই যেখানে ফিডার রুটগুলো থাকে সেখানেই সার দিতে হবে। দুভাবে সার দেয়া যায়। নালা পদ্ধতিতে গাছের গোড়া থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩.০ মিটার দূরে ৩০ সেমি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সেমি. গভীর করে চক্রাকারে নালা তৈরি করে তাতে সার দিতে হবে। পরে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। অথবা দুপুর বেলা যে জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে সেই জায়গায় সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। কোদাল দ্বারা কুপানোর সময় সোজা না কুপিয়ে পার্শ্বভাবে কোপাতে হবে যাতে করে গাছের শিকড় না কাটে।

৪। বাগানে নিয়মিতভাবে সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনই যেন রসের টান না পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফলন্ত আম গাছে দুইবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রথমবার প্যানিকল যখন ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২০ সেমি.) লম্বা হয় এবং দ্বিতীয়বার যখন ফল মটর দানার মতো হয়। এতে ফল এর আকার, মান ও ফলন ভালো হয়। প্রচন্ড খরা দেখা দিলে এবং ফল ঝরার পরিমাণ বেশি হলে তখনও সেচ দিতে হবে। গাছে ফুল আসার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় বাড ডিফারেনশিয়েশন হয়। ফলে গাছ অল্প পানির অভাব পছন্দ করে। কিন্তু যদি সেচ দেয়া হয় অথবা বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে গাছের ফুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজাবে বেশি করে কারণ বিটপে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে নতুন পাতা গজাবে।

৫। সাধারণত আম গাছের ডাল ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না। কারণ আমের মুকুল আসে ৪-৫ মাস বয়সের বিটপ এর মাথায়। তবে ছোট এবং বয়স্ক গাছের মৃত, শুকনা রোগাক্রান্ত শাখা ও কেবলমাত্র বয়স্ক গাছের পরজীবী উদ্ভিদ দ্বারা আক্রান্ত শাখা আম পাড়ার পর পরই ছাঁটাই করা দরকার। তাছাড়া গাছের ভেতরের অনেক সুস্থ ডাল থাকে যেগুলোতে ফুল ধরে না সেগুলো ছাঁটাই করা দরকার। ছাঁটাই এমনভাবে করতে হবে যেন গাছের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। কাটা ডালের মাথায় বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে করে রোগের আক্রমণ হতে না পারে। পেস্ট তৈরি জন্য তুঁত ২৫০ গ্রাম ও চুন ২৫০ গ্রাম নিয়ে এমনভাবে এক লিটার পানিতে মিশাতে হবে যাতে করে পেস্ট তৈরি হয়। এ পেস্ট তৈরির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশের মাধ্যমে ডালের কাটা অংশে প্রয়োগ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে,ডাল ছাঁটাই এর আগে গাছ নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে গুণসম্পন্ন ফল দেয়। এতে প্রতি বছর ফল না আসার সমস্যা কিছুটা কমানো যায়।

৬। যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।

Read 3145 times

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.