x 
Empty Product

গৌড়মতি

User Rating:  / 5
PoorBest 

এই আমটি ল্যাংড়ার চেয়েও অনেক সুমিষ্ট। এর টোটাল সলিউবল সুগার (টিএসএস) প্রায় ২১ শতাংশ। আর ল্যাংড়ার টিএসএস ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ। ক্ষিরসাপাত অর্থাৎ হিমসাগরের মিষ্টতা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ।

এই আমটি ল্যাংড়ার চেয়েও অনেক সুমিষ্ট। এর টোটাল সলিউবল সুগার (টিএসএস) প্রায় ২১ শতাংশ। আর ল্যাংড়ার টিএসএস ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ। ক্ষিরসাপাত অর্থাৎ হিমসাগরের মিষ্টতা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ।

এ ছাড়া অন্যান্য ভালো জাতের ভক্ষণযোগ্য অংশ ৮০ থেকে ৮২ ভাগ, কিন্তু গৌড়মতির ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৯৩ ভাগ। পাকলে আমটি হলুদাভার সঙ্গে সিঁদুরে রঙের মিশেলে অত্যন্ত চমৎকার দেখায়। এর ঘ্রাণও সুন্দর। সম্ভাবনাময় এই আমের প্রতিটির ওজন প্রায় ২৫০ থেকে সাড়ে ৩৫০ গ্রামের মতো। আশ্বিনা থেকে নাবি জাতের বৈশিষ্ট্য এবং ল্যাংড়া থেকে রং, আকৃতি ও স্বাদসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পেয়েছে এই জাতটি। এটি গবেষণাগারে সংকরায়িত (ক্রস) করে তৈরি করা কোনো জাত নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে এর সৃষ্টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাকৃতিক নিয়মে জন্ম নেওয়া অত্যন্ত সুমিষ্ট নতুন জাতের আম এটি । এই জাতের একমাত্র গাছটি রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার শিয়ালমারা গ্রামের জালু সর্দারের আমবাগানে।
আমের রাজা ল্যাংড়ার চেয়েও মিষ্টি এই নতুন আমটির বৈশিষ্ট্য হলো, এটি আমের মৌসুম শেষে অর্থাৎ আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পাকতে শুরু করে। ফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই আম পাওয়া যায়। বর্তমানে এ সময় শুধু আশ্বিনা জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু এই আম অত্যন্ত পচনশীল ও পোকাযুক্ত হয়। পক্ষান্তরে নতুন জাতের আমটি ল্যাংড়ার চেয়ে মিষ্টি। এর খোসা ও আঁটি দুটিই পাতলা এবং ছোট হওয়ায় আমটির ভক্ষণযোগ্য অংশও বেশি। এ ছাড়া আমটি সহজেই পচনশীল নয়। ফলে গাছ থেকে পাড়ার প্রায় আট থেকে ১০ দিন পর এটি নষ্ট না হয়ে পাকতে শুরু করে। এ ছাড়া এই আমে পোকামাকড়ের আক্রমণ একেবারে নেই বললেই চলে। তাই উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের ধারণা, নতুন জাতের এই আমটি গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমের জগতে নতুন এক বিপ্লব আসবে।
 কৃষিবিদরা নতুন জাতের এই আমটির নাম দিয়েছেন ‘গৌড়মতি’। কারণ শিবগঞ্জের এই এলাকাটি এক সময় প্রাচীন গৌড় রাজ্যের অধীনে ছিল। তাই সেখান থেকে নেওয়া হয়েছে গৌড়। আর অসময়ে অর্থাৎ আমের প্রায় শেষ মৌসুমে এই আমটি বাজারে আসবে বিধায় মানুষের মথ্যে এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। সেই অর্থে এই আমটি মতির চেয়েও মূল্যবান। এসব বিবেচনায় আমটির নামকরণ করা হয়েছে গৌড়মতি।
 আমবাগান মালিক জালু সর্দার জানান, তিন বছর আগে স্থানীয় শিয়ালমারা এলাকার আম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল হক ছয় বছরের জন্য বাগানটি ১৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেন।
 এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘প্রথম বছর দেখলাম আমের মৌসুম শেষের পথে, তারপরও আমগুলো পাকছে না। তাই সে বছর একেবারে সস্তা দামে তা বাজারে বিক্রি করে দেই। তা ছাড়া ওই গাছে আমের ফলনও ভালো হয়নি। এ অবস্থায় পরের বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করি এবং ফলন ভালো হয়। একটু অপেক্ষা করে সেই বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে আমগুলো পাকতে শুরু করলে আম খেয়ে অভিভূত হই। পরের বছর সেই আম প্রতি মণ ১১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি। গত বছর এই একটিমাত্র গাছে প্রায় ২৬ মণ আম উৎপাদন হয়।’
তিনি আরো জানান, এই আম গাছটির আনুমানিক বয়স ৩০ বছরেরও অধিক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘লোকমুখে আমটির স্বাদের কথা শুনে দুই বছর ধরে আমগাছটি পর্যবেক্ষণ করি। হর্টিকালচার সেন্টারে এই আমটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মিষ্টতার পাশাপাশি এই আমে অতি উচ্চমাত্রার খনিজ উপাদান বিদ্যমান। ইতোমধ্যে এই গাছের বেশ কিছু কলম তৈরি করা হয়েছে এবং আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে গৌড়মতি নাম দিয়েছি। পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এর চূড়ান্ত নামকরণ করা হবে।’
 তিনি বলেন, এই আমটি দেখতে অনেকটা ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের মতো। কিন্তু এই দুটি জাতের সঙ্গে হুবহু মিল নেই। এটি একেবারে প্রাকৃতিক নিয়মে জন্ম নেওয়া অত্যন্ত সুমিষ্ট নতুন জাতের একটি আম। সম্ভবত দৈবক্রমে প্রাকৃতিক নিয়মে আশ্বিনা ও ল্যাংড়া আমের মুকুল হতে পরাগায়ণের মাধ্যমে এই জাতের উদ্ভব হয়েছে।

 

আরও কিছু ছবিঃ

 

Leave your comments

0
terms and condition.

People in this conversation

  • Guest (ইয়ামিন)

    ভাই..এই আম কোন বছর থেকে বাজারে আসবে??