আম : এক নজর

User Rating:  / 1
PoorBest 

    আম আমাদের কাছে অতি পরিচিত ফল। সুপরিপক্ক ভাল জাতের াম খুব মুখরোচক বলবর্ধক ও সুস্বাদু ফল। স্বাদ ও গন্ধের উতকৃষ্টের দারুন জনপ্রিয়তায় আমের স্থান প্রথম। অন্যান্য ফলের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলে আমকে ফলের রাজা বলা হয়। মোঘল স¤্রাট আকবরের আইন-ই-আকবরীতে প্রথম আমের জাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতীয় খ্যাতনামা নর্তকীকে ‘আ¤্রপালী‘ উপাধী দান করে এই ফলকে যথেষ্ট মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

     আমের উতপাদন আশানুরুপ পর্যায়ে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এর রোগ বালাই প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। গাছের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে নানা প্রকার রোগ বালাইয়ের  আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।
*    রোগ বা পোকা দমনে ৪টি মুলনীতি মেনে চলা উচিত

•    সঠিক সময়ে দমন
•    সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ
•    সঠিক বালাইনাশক নির্বাচন
•    সঠিক মাত্রা নির্বাচন

*     স্বাদে, গন্ধে ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় আমকে ফলের রাজা বলা হয়।
*     বিশ্বে ১৫৯৫ জাতের আম রয়েছে
*      আম চাষের জন্য মাটির অম্লত্ব বা পি-এইচ মান ৫.৫ - ৭.০ সর্বোত্তম।
*     আম গাছের প্রধান মূল ১৫-২০ ফুট মাটির গভীরে যেতে পারে। আম গাছ ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত
    বাঁচে এবং ২০-১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
*     বছরে ২ থেকে ৫ বার ফ্লাশিং বা নতুন ডগা বের হয়।
*     ফুল বের হওয়া থেকে ফোটা পর্যন্ত ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। আবার ফুল ফোটা  থেকে ফল হতে
প্রায় দু সপ্তাহ সময় লাগে।
*      বাডিং বা কলমের উতকৃষ্ট সময় এপ্রিল-মে মাসে।
*     ফল পাকার সময় আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শকরো থাকলে আমের গুণাগুণের উচ্চমান বজায় থাকে।
*     ফুল-ফল ধারণের সময় বৃষ্টিপাত না হওয়া ভাল।
*     জুন-আগষ্ট মাসে আম গাছের যত বেশী নতুন পাতা বের হবে পরবর্তী বছরে ততই ভাল সমস্ত
ডগায় ফুল আসার সম্ভাবনা থাকে।     
*     গবেষণায় দেখা যায় প্রতি মুকুলে / পুষ্টমঞ্জুরীতে / থোকায় ১টি করে গুটি থাকলেই সে বছরে
আমের বাম্পার ফলন ধরা হয়।
*     জুলাই-আগষ্ট মাসে প্রুনিং ও সার দেয়া উত্তম।
*     ফলবান আম বাগানে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সেচ / পানি না দেয়া ভালো।
*     বাগানে বছরে ৩ বার চাষ দিতে হয়- বর্ষার আগে, বর্ষার পরে এবং শীতকালে।
*     টবে রাখা আম গাছের শিকড় ৩-৪ বছর অন্তর বর্ষার শুরুতে ১/৩ (তিন ভাগের এক ভাগ) অংশ
ধারাল  ছুরি  দিয়ে কেটে বাদ দেয়া উচিত।
*     সফল আপদ ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান বিবেচ্য দিক হচ্ছে সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা।
*     বর্ষা মৌসুম শেষে বছরে একবার আম গাছেল অপ্রয়োজনীয়তা, মৃত, অর্ধমৃত ডালপালা ছাঁটাই করে পর্যাপ্ত আলো বাতাস  চলাচলের  ব্যবস্থা করলে ৩০-৪০% হপারের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়।
*     বরুনের অভাবে আম ফেটে যায় এজন্য আম ধরার পর ১৫ দিন অন্তর ২ বার ২ গ্রাম হারে বরুন স্প্রে করা উচিত।
*      গুটি মটর দানা হলে প্লানোফিক্স হরমন ৪.৫০ লিটার পানিতে ১ মিলি হারে দিয়ে সকাল বিকেলের কম আলোতে স্প্রে করলে ফলের আকার বৃদ্ধি পায় এবং ফল ঝরা কমে।
*     আম পানিতে রাখলে ডুবে গেলে গাছ থেকে আম পাড়ার উপযুক্ত সময় বলে ধরা যায়।
*  গাছ থেকে আম পড়ার পর পরই গাছের মরা ডালাপালা প্রুনিং  (কেটে ফেলা) উচিত এবং জমিতে জো এর ব্যবস্থা করে সত্বর সার দিয়ে ছত্রাক নাশক স্প্রে করা উচিত।
*      আম পচনের হাত থেকে রাক্ষা করতে ৫৫ ডিগ্রি সে: গরম পানিতে ৫ মিনিট ডুবিয়ে শুকিয়ে নিয়ে গুদামজাত বা প্যাকিং করা উচিত।
*     দেরীতে পাকে এমন আম বেশী  বৃষ্টিপাতের কারণে ফল রোগাক্রান্ত বেশী পরিমাণে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কাজেই জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ম্যঅকোজের (ডায়াথেন গ) ২.৫০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করা উচিত।
*      বাগানে মৌমাছি পালন ভাল। এতে ফুলের পরাগ সংযোগ ভালভাবে হবে ও ফল কম ঝরবে।
*      অনুন্নত জাতকে উন্নত জাতে পরিণত করতে টপ ওয়াকিং এর মাধ্যমে করা যায়। কর্তনের কাজটি ফেব্রুয়ারী ২য় সপ্তাহে সঠিক সময়।

ডাল / কান্ড কর্তনের পর ৩০-৪৫ দিন পর নতুন শাখা বের হয়। গাছের বয়স, সাইজ অনুযায়ী ৫০-১০০ টি শাখায় ভিনিয়ার কলম করলে চতুর্থ বছর থেকে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
*     বোর্দো পেস্ট বানাতে ১০০ গ্রাম তুঁতে + ১০০ গ্রাম চুন + ১ লিটার পানি দিয়ে পেস্ট তৈরী করতে হবে।
*     একটি মূল্যবান ছত্রাকনাশক (Sulphur) সালফার তৈরীতে ১ কেজি গন্ধক গুড়ো + ১ কেজি চুন ও ৭৫ লিটার পানি। একটি প্লাষ্টিক বা সিমেন্টের বড় চাড়িতে পাথর চুন নিয়ে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুন ফুটতে শুরু করলে গন্ধকের মিহি গুড়ো চুনের উপর দিয়ে এক কাঠের দন্ডের সাহায্যে ভাল করে মিশ্রনটি নাড়তে হবে এবং প্রয়োজন মত কিছু কিছু পানি ঢেলে আঠার মত অবস্থায় আনতে হবে। চুনের তাপে গন্ধক খুব ভালভাবে মিশে  যাবে। চুনের ফোটা বন্ধ হলে বাকি পানিটুকু  মিশিয়ে মিশ্রণকে ঠান্ডা করে ছেঁকে স্প্রে করতে হবে।

বি:দ্র:- চুন গন্ধক মিশ্রন রাষ্ট, পাউডারী মিলডিউ, মাইটস দুর করতে বিশেষভাবে উপকারী।

*     মিকচার তৈরী - ১ কেজি তুঁতে + ১ কেজি পাথর চুন + ১০০ লিটার পানি। আগের দিন রাতে ৫০ কেজিতে আলাদা আলাদা প্লাষ্টিকের পাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন ১০০ লিটার পানির সাথে তুঁতে চুন একত্রে ঢেলে মিশ্রণ তৈরী করতে হবে।

মিশ্রন তৈরী করার ঠিক পরেই গাছে স্প্রে করতে হবে। পরে ব্যবহারের জন্য রাখা চলবে না। বোর্দো মিশ্রণের রঙ নীল আকাশের মতো হবে। মিশ্রনে তুতের মাত্রা বেশী হলে  পাতার ক্ষতি হবে। একটি চকচকে চাবিকাঠি মিশ্রণে ৩০ সেকেন্ডে ডুবিয়ে নিয়ে দেখতে হবে লোহায় মরচে রং ধরে নাকি।
মরচে রং না ধরলে বুঝতে হবে মিশ্রণে চুন ও তুুতের অনুপাত ঠিক আছে। নতুবা প্রয়োজন মতো কিছু চুন মেশাতে হবে। বোর্দো মিশ্রনের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ঔষধ সহজে ধুয়ে যায় না।

সার প্রয়োগ : চারা লাগানোর পরের বছর থেকে প্রতিবছর দুবার সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন সার একটু বেশী পরিমানে দেয়া ভালো। এক্ষেত্রে এর অভাব মেটাতে অধীক পরিমানে জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বর্ষার শুরুতে নাইট্রোজেন ও কম্পোস্ট সার দিতে হবে। বর্ষার শেষে সুপার ফসফেট ও পটাশ এবং কম্পোস্ট সার দিতে হবে। যে বছর গাছে ভাল আম হবে সে বছর ঐ গাছে নাইট্রোজেন এর পরিমান ১৬০০ গ্রাম পর্যন্ত বেশী দেয়া যায়।
বিষটোপ : ২ লিটার পানি + ২০০ গ্রাম গুড় + এ্যাডমায়ার ১০ এম.এল/ সেভিন ৫ গ্রাম।

Leave your comments

0
terms and condition.
  • No comments found