আমগুলো গাছ থেকে নামানো হতে ট্রান্সপোর্ট বা কুরিয়ার পয়েন্টে পৌছানো পর্যন্ত আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকে। এর পর এটা একরকম আমাদের আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যায়। আর আম সিজনে কুরিয়ার সার্ভিস গুলো অতিরিক্ত চাপের কারনে তাদের সেবার মান ঠিক রাখতে পারেনা। ফলে আমগুলো হাতে পেতে একদিকে যেমন দেরি হয়, অন্যদিকে আমগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনাও থাকে।
তাই আমগুলো হাতে পাবার পর নিন্মের বিষয়গুলো অতি যত্নের সাথে খেয়াল করুন:
আমগুলো হাতে পাবার পর সবার আগে কি করবেন?
কেমিক্যাল বিহীন আম গুলো অনেক সংবেদনশীল হয়। তাই উপযুক্ত সংরক্ষনের অভাবে আমগুলো আংশিক বা পুরোপুরি নষ্ট/পঁচে হয়ে যেতে পারে। তাই নিম্নে বর্নিত কিছু বিষয় অবশ্যই নজরে আনা দরকার:
১. আম গুলো হাতে পাবার পর যত দ্রুত সম্ভব আম গুলোকে কাটুন বা ক্যারেট থেকে বের করে ফেলতে হবে । আমের গায়ে ভেজা বা আদ্র ভাব দেখলে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে তা আদ্রমুক্ত করতে হবে। ভেজা ঘামযুক্ত আমে এন্থ্রাকজন নামক ছত্রাক খুব সহজেই আক্রমন করে।
২. এর পর পরিষ্কার খড়/পাটের বস্তা/কাঠের তক্তা / মোটা পেপার বা কাটুন বিছিয়ে তার উপরে আম রাখাতে হবে । নিচের ঠান্ডা আবহাওয়া আম কে আধাপাকা-আধাকাঁচা করতে সাহায্য করে। ফলে আমগুলো টক ও খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। আম পাকার জন্য গরম এরং শুষ্ক ঘর বেছে নিন। এক্ষেত্রে বদ্ধ স্টোর রুম সবচেয়ে ভালো হতে পারে।
৩. পরিবহনের কারনে আঘাতপ্রাপ্ত আম গুলো আলাদা করে ফেলতে হবে । কারন এগুলো সবার আগে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
৪. আম পাকানোর জন্য AC রুম বা খোলা বারান্দা পরিহার করুন।
৫। আম গুলো দিনে কয়েকবার চেক করুন। চেক করতে আঙ্গুলের চাপ দিবেন না। ঠোঁকা দিয়ে পরীক্ষা করুন। টক-টক শব্দ মানে কাঁচা, ঠস-ঠস শব্দ মানে পাকা। নাকের সাহায্য নিন। ফরমালিন মুক্ত পাকা আমের একটা মনকাড়া সুন্দর সুগন্ধ আছে। আম পেকে গেলে দ্রুত খেয়ে ফেলুন। পাকা আম পঁচতে মাত্র কয়েকঘন্টা সময় লাগে।
৬। মিষ্টি আমগুলো কাঁচা অবস্থায় খুব বেশি টক থাকে । তাই আম পাকার সঠিক সময়ের আগে খেলে আমগুলো অবশ্যই টক লাগবে ।
৭। প্রয়োজনের বেশি আম পেকে গেলে আমের বোঁটা/মুখ কেটে পলিথিনে পুরে ফ্রিজে নরমালে রেখে দিন। ৫-৭ দিন স্বাভাবিক থাকবে। তবে সাবধান, বেশি দিন হলে পাল্ব/জুস হয়ে যাবে।
৮। কোন সমস্যা হলে সংকোচ ছাড়া সরাসরি ফোন দিন: ০১৮৮২৭৩০.৫৫৫ নাম্বারে।
:: লক্ষ করুন ::
১। আম গুলোকে পানিতে ধুবেন না বা “হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট” করবেন না। এতে আমগুলো ঠিকমত পাকবেনা।
২। বাক্স, বালতি, ক্যারেটের মধ্যে বা আমের উপর আম গাদা রেখে আম পাকাতে দিবেন না।
৩। ঠান্ডা মেঝের উপর সরাসরি আম পাকাতে দিবেন না। এতে আমের অংশ বিশেষ কাঁচা থাকবে।
৪। আমের আঠা শরীরে লাগলে সাথে সাথে পানি/সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ৮/১০ মিনিটেই এটা ক্ষত সৃষ্টি করে ফেলতে পারে। চোখে পড়লে ভয় পাবার কিছু নাই, সাথে সাথে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আরও শঙ্খামুক্ত হতে চাইলে পানি সহ বড় বালতিতে মুখ ডুবিয়ে পানির মধ্যে কয়েকবার চোখ খোলা-বন্ধ করতে থাকুন। ক্ষতির আশংকা দেখলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৫। প্রয়োজনের বেশি আম পেকে গেলে আমগুলো ফ্রিজে রেখে দিন। সম্ভব না হলে আমের খোসা ছড়িয়ে আঠি ফেলে পাল্ব (আমের খাদাংশ) বানিয়ে ফ্রিজে রাখুন। পরে জুস/আমসত্ব বানানো যাবে। বড় প্লেট/বোল/হাঁড়িতে তেল মাখিয়ে তার উপর পাল্ব ঢেলে রোদে বা গ্যাসে শুকালেই আমসত্ত তৈরি হয়ে যায় যা বছরজুড়ে খাওয়া যায়।
৬। যেহেতু আমরা আমে কোন কেমিক্যাল ব্যাবহার করি না, তাই সামান্য কিছু আম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এটাকে স্বাভাবিক মনে করুন। আধাপাকা, আঘাতপ্রাপ্ত, নষ্ট আমগুলোর ভালো অংশগুলোকে ফেলে দিবেননা। এগুলোকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে পাকা আমের ন্যায় পাল্ব তৈরি করুন। মজাদার টক আমসত্ব তৈরি হবে যা শিশু বা মেয়েরা খুব পছন্দ করে।
আম দ্রুত পাকাতে চাইলে যা করবেন:
আমগুলো একটি কাগজের শপিং ব্যাগে ভরে নিন। ব্যাগের ভেতরে দশটি আমের জন্য ফরমালিন মুক্ত একটি আপেল/কলা/টমেটো রেখে দিন। কাগজের ব্যাগের মুখটি ভালোকরে বেঁধে দিতে হবে। এগুলো থেকে নির্গত “ইথিলিন” গ্যাস আম গুলোকে দ্রুত পাকাতে সাহায্য করবে। আম ভর্তি ব্যাগটি স্টোর রুমে বা গরম কোনো স্থানে রেখে দিতে পারেন। ০১ থেকে ০২ দিনের মধ্যেই আম গুলো খাবার উপযোগী হবে।
আম দেরিতে পাকাতে চাইলে যা করবেন:
পুষ্ট কাঁচা আম আশ্যাওড়া পাতা বা দাতন গাছ (এক প্রকার শ্যাওড়া পাতা) বা লাউ-কুমড়ার পাতা বা কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দিলে অখবা কুসুম গরম পানিতে ৫-৬ মিনিট ধুয়ে বেশ কয়েকদিন সংরক্ষণ করা যায় ।
আম বেশিদিন কাঁচা রাখতে চাইলে যা করবেন:
লবণ মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খাবার জন্য অথবা তরকারিতে ব্যাবহার করার জন্য অনেকে আমগুলোকে বেশিদিন কাঁচা রাখতে পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত আমগুলোকে সরিষার তেল মাখিয়ে রেখে দিলে বেশ কয়েকদিন দিন কাঁচা থাকে। এছাড়াও বোঁটা কেটে ফ্রিজে ডিপে রেখে দিলেও অনেক দিন ভালো থাকে।
আমাদের প্রতি আস্থা বাড়াতে আপনি চাইলে নিন্মের পদ্ধতি অবলম্বন করে আমগুলো পরীক্ষা করতে পারেন:
১। ফরমালিন যুক্ত আমে কক্ষনও মাছি বসে না। তাই পাকা আমে মাছির আগমন দেখলে আপনি নিশ্চিত যে আমে ফরমালিন বা কেমিক্যাল নাই।
২। আম গাছে থাকা অবস্থায় আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।
৩। কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো অপরিপক্ক অবস্থাতেই পেড়ে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়। অতিরিক্ত কেমিক্যাল স্প্রে বিহীন পরিপক্ক আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।
৪। পরিপক্ক গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কার্বাইড দেওয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেওয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।
৫। হিমসাগর, আশ্বিনা, ছাড়াও আরও নানান জাতের আম আছে যা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।৬। আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। কেমিক্যাল দেওয়া আম হলে কোনো গন্ধ থাকবে না, কিংবা বিচ্ছিরি বাজে গন্ধ থাকবে।
৭। আম মুখে দেওয়ার পর যদি দেখেন যে কোনো স্বাদ নেই কিংবা আমে টক বা মিষ্টি কোনো ভাব নেই, বুঝবেন সে আমে কেমিক্যাল দেওয়া।
৮। আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে এ মিষ্টি গন্ধ হবেই না।
৯। আমের গায়ে সাধারণত এক ধরনের সাদা পাউডারের মতো থাকে। যা পানিতে বা ফরমালিনে চুবালে চলে যায় । এটাও খেয়াল রাখুন।
১০। কেমিক্যালে পাকানো আম হলুদ না হয়ে সাদার মত রং ধারণ করে। অনেক সময় ক্রেতার নজর কাড়তে ও আমের গায়ে থাকা দাগ দূর করতে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। কিছু আম আছে যে পাকলেও চামড়া সবুজ থাকে এরকম আম ক্রেতারা দেখেই কিনতে চায় না। তাই এরকম ক্রেতাদের ভুলের কারণেও কেমিক্যালের ব্যবহার হয়।